সকালে খালি পেটে কি খাবেন ?
আসলে আমরা দেখতে পাই সকালে অনেকে অনেক কিছুই খেয়ে থাকেন। ইউটিউব বা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেকে সার্চ করে অনেক ধরনের তথ্য পেয়ে থাকেন যে , সকালে খালি পেটে কি খাবেন, বা কি খেতে হবে, এটি আসলে কোথাও বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা নেই যে সকালে খালি পেটে কিছু খেতেই হবে। এই ব্যাপারটি প্র্যাকটিস করেন তারাই বেশি যারা ওজন কমাতে চান এবং যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং অনিয়ন্ত্রিত প্রেসার আছে।
তাই সবার উদ্দেশ্যে বলছি খালি পেটে কি, কার জন্য খেলে ভালো হবে
- প্রথমত
আমাদের দেশের
মানুষের একটি
বড় প্রবণতা
হচ্ছে ওজন
কমাতে হলে প্রথমে ভাবেন সকালে খালি পেটে কি খাবেন অথবা
অনেকে মনে
করেন সকাল
বেলা খালি
পেটে গরম
পানি দিয়ে
লেবু এবং
মধু পানির
সঙ্গে মিশিয়ে
খেলে অনেক
উপকার পাওয়া
যায়। কিন্তু
এটা সবার
জন্য প্রযোজ্য হবে ব্যাপারটা ঠিক সেরকম
নয়।
- সকালবেলা লেবু-মধু
পানীয় পান
করা মানেই
হচ্ছে যে
এটি আপনার
মেটাবলিজম কে
বাড়াবে, আপনার বিপাক
ক্রিয়া বাড়ানোর ফলে আপনার
ওজন কমাতে
সাহায্য করবে এবং আপনার
শরীরটা ওয়ার্ম
আপ করবে।
দীর্ঘ সময়
খালি পেটে
থাকার ফলে লেবুপানির কম্বিনেশন টি
যখন আপনার
স্টোমাক বা পাকস্থলীতে যাবে, এটি আপনাকে
কিছুটা এনার্জেটিক করে তুলবে
আপনাকে সচল
করবে এবং
আপনার মেটাবলিজম পাওয়ারকে অনেক
বুষ্টঅ্যাপ করবে।
আর সেই
সাথে লাইফ
স্টাইল মেন্টেন
করতে পারলে
আপনি ওজন
কমাতে পারবেন। সকালে খালি পেটে কি খাবেন এটা নিয়ে টেনশান করবেন না
- এটি
সাধারণত আপনারা
সবাই মেনে
চলতে পারেন
কিন্তু, যাদের কিডনি
প্রবলেম আছে,
যাদের লেবুতে
এলার্জি বা
অ্যাসিডিটি হয়েছে,
অথবা মধুতে
যাদের এলার্জি
রয়েছে যাদের
এসিডিটি প্রবলেমের কারণে টক
খেতে পারেন
না এ
ধরনের মানুষের
জন্য এই
প্রসেস টি
একদমই নিষেধ।
- অনেকে
আছেন যারা
জিরা পানি বা
মেথির পানি খেয়ে
ওজন কমানোর
চেষ্টা করেন।এটি আসলে কতটুকু
উচিত বা
উচিত নয়
চলুন এগুলো
সম্পর্কে একটু
জেনে নেই।
মেথির পানি
মেথি ভেজানো পানি খেলে বা সারারাত মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে এর পানি খেলে মনে করা হয়ে থাকে আপনার প্রেশার নিয়ন্ত্রণে আসে, কোলেস্টেরল কমে এবং এটি ডাইজেশন এ অনেক সাহায্য করে থাকে। মেথি ভেজানো পানি যে সবার জন্য প্রযোজ্য হবে ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। বিশেষ করে যে সকল ব্যক্তির লো প্রেসারের সমস্যা আছে অথবা যাদের বংশগতভাবে কিডনি জনিত সমস্যা আছে, তারা যদি দীর্ঘ মেয়াদিভাবে মেথি এবং মেথি ভেজানো পানি পান করেন তাহলে তাদের সমস্যা হবার সম্ভাবনা থাকে।
তাই যাদের আসলে ব্লাডপ্রেশার অনেক হাই বিপি থাকছে, অনেক অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড প্রেসার থাকছে অথবা যাদের ডাইজেশনে প্রচন্ড সমস্যা আছে, এসিডিটির সমস্যা আছে শুধুমাত্র তারাই সকালে কিছুদিন মেথি ভেজানো পানি খেলে এবং লাইফ স্টাইল ঠিকভাবে পরিচালিত করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তবে এটি দীর্ঘ মেয়াদী ভাবে একটানা না খেয়ে যাওয়ার জন্য ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অযথা অনির্ভরশীল কোন সূত্র থেকে শুনে বা দেখে এ পানীয় পান করবেন না। তাতে হিতে বিপরীত হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
জিরা পানি
এই পানীয়টি আমাদের দেশের অনেক মানুষের কাছে খুবই পপুলার এবং সমাদৃত । জিরা পানির যে অনেক বেশি সাইড ইফেক্ট আছে ব্যাপারটা ঠিক সেরকম নয়। তবে বলা হয় যারা ব্রেস্ট ফিডিং মা আছেন এবং যারা প্রেগনেন্ট তাদেরকে এ পানি না খেতে ডাক্তারের পরামর্শ দিয়েছেন। আরেকটি ব্যাপার মনে রাখতে হবে জিরা পানি যে আপনার ওজন কোলেস্টরেল এবং প্রেসার কমাতে সাহায্য করে ব্যাপারটি কিন্তু তেমন নয়। জিরা পানি আপনার মেটাবলিজম পাওয়ার কে বুস্টাপ করতে সাহায্য করে। আর মেটাবলিজম পাওয়ার বৃদ্ধি পেলেই সেটি আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে। আবার জিরা পানি খেলে ডাইজেশন টা একটু ভালো হয় পেট পরিষ্কার থাকে এটা সত্যি। এবং সঠিকভাবে ডায়েট চার্ট মেন্টেন করলে এটি আপনার উপকারে আসতে পারে। তবে এটির কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই তবে গর্ভবতী মা এবং যারা রক্ত তরলীকরণের ওষুধ খাচ্ছেন তাদের জন্য জিরাপানি না খেতে ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়েছেন। তবে বাঙালি হিসেবে আমরা রান্নায় অনেক বেশি জিরা ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আস্ত জিরা পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার ফলাফল আসলেই অন্যরকম হয়ে থাকে। তবে আবারো বলছি এ ধরনের পানীয় পান করার আগে অবশ্যই নিজের অবস্থা বুঝে দেখবেন, এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পান করবেন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোন সূত্র দেখে এই পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন।
আসুন দেখি আরো কিছু পানীয় যা আমরা সকালে খালি পেটে খেয়ে থাকি
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সকালে খালি পেটে কি খাবেন এটা চিন্তা করে, ইসুবগুল খান, চিয়ার সিডস বা তোকমা খান এটি অনেক স্বাস্থ্যকর। এটি সাধারণত আপনার ডাইজেশন কেই উন্নত করে না, আমাদের শরীরের সারাদিনে যে টক্সিক জমা হয় সে গুলোকে বের করতে, কোলেস্টেরল কমাতে, ওজন কমাতে অনেক সাহায্য করে। কিন্তু এগুলো আসলে সবার জন্য উপকারী স্বাস্থ্যকর ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। যাদের লুজ মোশন টেন্ডেন্সি আছে, যাদের এলার্জি আছে তোকমা এবং ইসুবগুলে, যাদের কনস্টিপেশন আছে তাদের জন্য এই পানীয়গুলো উল্টো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো খাওয়ার আগে ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ করে নিবেন যে এগুলো আপনার শরীরের জন্য উপযোগী কিনা। তবে এগুলোর খুব একটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না থাকলেও সকালে খালি পেটে যে এগুলো খেতে হবে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
চলুন দেখি কারা সকালে খালি পেটে কিছুই খাবেন না
যারা থাইরয়েডের মেডিসিন নিচ্ছেন তারা, থাইরয়েড নেওয়ার একঘন্টা পরে সকালের নাস্তা করে ফেলবেন, এরমধ্যে কোন কিছু খাবেন। অভিজ্ঞ নিউট্রিশিয়ান দের মতে সকালে খালি পেটে কি খাবেন এর জন্য সবচেয়ে বেস্ট ডিটক্স বা টক্সিক সরানোর উপায় হচ্ছে বেশি করে পানি পান করা। এর উপরে কোন কিছুই আসলে নেই। সকালে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বসে আপনি যদি দুই থেকে তিন গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানি খেতে পারেন, এটি আপনার জন্য অনেক বড় এবং উপকারী ওষুধ হিসেবে কাজ করবে। কারণ, পানির কোন সাইড ইফেক্ট পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। পানি আপনার শরীরের সারারাতের অবসাদ ভাব কি দূর করবে, আপনার ইউরিন কে পরিষ্কার করবে, আপনার এসিডিটি সমস্যা থাকলে সেটিকে নিউট্রিলাইজ করবে। সুতরাং পানি হতে পারে সকালবেলার খালি পেটে সবচেয়ে উপযোগী ড্রিংক্স। যেটি পান করলে কারো সাইড ইফেক্ট নিয়ে কোন ভাবনা থাকবে না এবং এটি কারো জন্য ক্ষতিকর নয়।
তাই সকালে খালি পেটে কি খাবেন এটি নিয়ে যারা কনফিউশনে আছেন বা কোন এক্সপার্ট এর কাছে যেতে পারছেন না ভাবছেন আমার জন্য কোনটি প্রযোজ্য হতে পারে, তারা নির্দ্বিধায় সকালে অন্তত পক্ষে এক থেকে দুই গ্লাস পানি পান করতে পারেন। আর সেটি অবশ্যই ৯০ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে বসে বিসমিল্লাহ বলে পান করবেন।
বিশেষভাবে লক্ষণীয়
যারা থাইরয়েডের মেডিসিন নিছেন, যারা ইনসুলিন নিচ্ছেন, যারা রক্ত তরলীকরণ ওষুধ খাচ্ছেন এবং গর্ভবতী মা আছেন তারা কোনভাবেই অন্য কোন পানীয় পান না করে শুধুমাত্র এক থেকে দুই গ্লাস পানি খেয়ে সরাসরি সকালের নাস্তা করে ফেলবেন এবং সঙ্গে আপনার মেডিসিন এবং ইনসুলিন নিবেন।
সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন। সকালবেলা খালি পেটে কি খাবেন এটা নিয়ে এত টেনশন না করে শুধুমাত্র পানি খেয়ে আপনি দিন শুরু করতে পারেন।
উপরের আর্টিকেলটি যদি আপনার এতোটুকু ভালো লেগে থাকে এবং উপকারে আসে এটি আপনার আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব এবং শুভাকাঙ্খীদের সাথে শেয়ার করতে পারন।
Comments
Post a Comment